FAQ Bangla

খসড়া, জুন ২০১৯

Frequently Asked Question_English

১. আপনারা আইএনজিও বিরোধি?

মোটেই না। আমরা আইএজিও বিরোধি নই। আমরা বিশ্বাস করি, আইএনজিও এবং আমরা (স্থানীয় এবং জাতীয় এনজিও) সবাই একই সমাজের অংশ কিন্তু আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে।

২. আপনাদের বিবৃতি আইএনজিও বিরোধি বলে মনে হয়?

এটি মনে হতে পারে। তবে, আমরা যা বলছি এগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন দলিল যেমন, অংশিদারিত্বের নীতিমালা, গ্রান্ড বারগেইন ও চার্টার ফর চেঞ্জ প্রতিশ্রুতি এবং উন্নয়ন কার্যকারিতা ইত্যাদি থেকে উৎসারিত বক্তব্য। আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহ সেগুলো এনডোর্স করেছে, সম্মতি জ্ঞাপন করেছে এবং অনুমোদনও করেছে। আমরা নতুন কিছু বলছি না, শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ করছি। তাদের নীতিমালা ও চর্চায় সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যতটুকু ঘাটতি চোখে পড়েছে, ততটুকুই আমরা উত্থাপন করেছি।

৩. আইএনজিও এবং স্থানীয়/ জাতীয় এনজিওর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে- কথাটার অর্থ কি?

আমরা বিশ্বাস করি, আইএনজিওসমূহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে, এবং স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার মতো বিকশিত হতে তারা স্থানীয় এনজিওদের সহায়তা করবে।

৪. স্থানীয় এনজিওকে স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তার অর্থ কি?

আইএনজিওগুলোর উচিত স্থানীয় এনজিওকে সার্বভৌম, দায়িত্বশীল এবং টেকসই সংগঠন হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা যাতে তারা নিজ এলাকার মানুষকে সেবা দিতে পারে। উত্তর বিশ্বের আইএনজিওগুলোর জ্ঞান এবং প্রযুক্তির সুবিধা আছে। তারা একটি নির্ধারিত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এই জ্ঞান এবং প্রযুক্তি স্থানীয় এনজিওদের মাঝে স্থানান্তর করতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ বিশ্বের অনেক স্থানীয় সংগঠন আইএনজিও থেকে এ ধরনের সহায়তা পেয়ে সার্বভৌম, দায়িত্বশীল এবং টেকসই সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে।

৫. কিভাবে আমরা আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় এনজিওদের মধ্যে পার্থক্য করবো?

এইক্ষেত্রে আমরা আইএএসসি (ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটি) কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞার সহায়তা নিয়েছি, যেখানে বলা হয়েছে-

যেসকল এনজিও জাতীয় সীমারেখার বাইরে নানা দেশে কাজ করে এবং কোনো একটি দেশে আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের সদস্য সংগঠন হিসেবে কাজ করে তাদেরকে আইএনজিও বা আন্তর্জাতিক এনজিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়।যেসকল এনজিও সারাদেশে কাজ করে তাদেরকে জাতীয় এনজিও হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

যেসকল এনজিও কোন একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা এলাকায় জন্মলাভ করে এবং ঐ এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করে তাদেরকে স্থানীয় এনজিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৬. স্থানীয় সংগঠনের ‘সক্ষমতা উন্নয়ন’ প্রয়োজন- এ ব্যাপারে কি আপনাদের দ্বিমত আছে?

“সক্ষমতা উন্নয়ন” (Capacity Development) শব্দটির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে- এটি আরোপিত এবং একপাক্ষিক বিষয়। জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার কমিশনার মেরি এন্ডারসন এই শব্দটিকে ঔপনিবেশিক পরিভাষা হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছিলেন, কারণ এই শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয় বিদেশি সংগঠনের সাথে মানিয়ে নেয়ার মতো ‘সক্ষমতা’ দেশি মানুষদের নেই ।

এই শব্দটির পরিবর্তে আমরা বলতে চাই “সক্ষমতা বিনিময়” (Capacity Development), যার অর্থ হচ্ছে স্থানীয় সংগঠনেরও কিছু দক্ষতা বা সক্ষমতা আছে তার স্বীকৃতি দেয়া। যেমন: তারা স্থানীয় সংস্কৃতির অংশিদার এবং স্থানীয় ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার কৌশল তারা জানে। যেমন-সিরিয়া এবং আফগান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সকল মানবাধিকার দলের কাছে এটি স্বীকৃত হয়েছেন যে-স্থানীয় এনজিও’র এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংগঠনের চেয়ে বেশি সক্ষমতা রয়েছে।

কাজেই, “সক্ষমতা বিনিময়” শব্দটি বলার মাধ্যমে আমরা একটি সমতাভিত্তিক সম্পর্কের ভিত্তিতে দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে পারষ্পারিক শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেই।

৭. দাতাসংস্থা কর্তৃক স্থানীয় এনজিও, আইএনজিও এবং ইউএন সংস্থার সাথে অংশিদারিত্বের ক্ষেত্রে জিম্মাদার ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতার ঝুঁকির ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কি?

আমরা কখনই বলিনি যে, জিম্মাদারী ব্যবস্থাপনায় কোন আপোষ করতে হবে। বরং আমরা বলি যে, স্থানীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ি এই শব্দটার পুনর্সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, স্থানীয় সংগঠন বরং আক্রান্ত জনগোষ্ঠি এবং স্ট্রেকহোল্ডারের কাছে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে, যেভাবে গ্রান্ড বারগেইনের ৬ নম্বর কর্মধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় ছোট সংগঠনের ক্ষেত্রে এমন অনেক উদাহরণ আছে যে, তারা প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে অংশিদারিত্বের জিম্মাদারী রক্ষা করে আসছে- বাংলাদেশের এমজেএফ (মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন) ১৫০ টির অধিক সংগঠনের মাঝে ডিএফআইডি এবং অন্যান্য দাতাসংস্থা হতে প্রাপ্ত তহবিল ব্যবস্থাপনা করছে। বিশেষ করে তারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কোন বিদেশী বিশেষজ্ঞের সহায়তা ছাড়াই কাজ করছে।

আমরা বিশ্বাস করি, দেশীয় ও দক্ষিণ বিশ্বের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সক্ষমতা, জবাবদিহিতা এবং অন্যান্য চাহিদার বিষয়গুলো অনুধাবন ও তার সূচক পুনর্নির্ধারন হওয়া দরকার। আমরা এক্ষেত্রে একটা কথা বলে থাকি, “উত্তম বাস্তবায়নের জন্য, হিসাবের সক্ষমতার (accounts-ability) চেয়ে জবাবদিহিতা (accountability) আগে আসা উচিত”।

৮. আপনাদের একটি ঢালাও দাবি আছে, সকল ইউএন সংস্থা এবং আইএনজিও’র মাঠ অপারেশন ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিতে হবে, এটি কি বাস্তবসম্মত?

প্রথমত, আমরা এটি স্পষ্ট করতে চাই যে, ইউএন এবং আইএনজিওর ফিল্ড অপারেশন থেকে সরে যাওয়ার দাবির অর্থ এই নয় যে, আমরা এই দেশ হতে তাদের পূর্ণ প্রত্যাহার চাইছি।

আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা মনিটরিং এবং কারিগরি সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রমে উখিয়া- টেকনাফের সকল মাঠ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবে স্থানীয় সংগঠন, স্থানীয় সরকার এবং অন্যান্য স্থানীয় পক্ষ, যেখানে ইউএন এবং আইএনজিও’র ভূমিকা হবে কক্সবাজার এবং ঢাকায় অবস্থান করে স্থানীয় অংশিদারদের মনিটরিং এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করা।

এটাই সামগ্রিক সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি বা হোল অফ সোসাইটি এপ্রোচ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে, স্থানীয় এনজিও এবং সিএসও’র বিকাশ ঘটাবে, স্থানীয় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং কার্যক্রম ব্যয় কমাবে।

আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে বিশেষ করে এনজিও এবং সিএসও তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, ইউএন এবং আইএনজিও’র উচিত মনিটরিং এবং কারিগরি সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

প্রকৃতপক্ষে সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি এমন হওয়া উচিত যে, ইউএন এবং আইএনজিও’র প্রধান উদ্দেশ্য স্থানীয় এনজিও সিএসও’র বিকাশ সাধনে সহায়তা করা। এই কারণে তাদের দক্ষিণের দেশগুলোতে ফিল্ড অপারেশন থেকে সরে আসা উচিত।

৯. আপনারা কি মনে করেন কিছু বিষয়ের এডভোকেসি শুধুমাত্র জাতিসংঘ সংস্থা এবং আইএনজিও’র নেতৃত্বে হওয়া উচিত?

এমন কোন সমস্যা বা ইস্যু বলতে গেলে নেই যা জাতিসংঘ এবং আইএনজিও নেতৃত্বেই শুধু অধিপরামর্শ করা উচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণের দেশগুলোর নীতি-নির্ধারকরা স্থানীয় কোনো বিষয়ে বিদেশি সংস্থার চাইতে নিজেদের সিএসও/স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে বেশি শুনতে ইচ্ছুক। তাই দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বশীলতার জন্য স্থানীয় সংগঠনগুলোকেই এডভোকেসির বিষয়গুলোতে নেতৃত্ব গ্রহন করতে হবে। বাংলাদেশের স্থানীয় সিএসও এবং এনজিওসমূহের সফলভাবে অনেক স্পর্শকাতর স্থানীয় বিষয়ে অধিপরামর্শ এবং প্রচারাভিযান সম্পন্ন করার উদাহরণ আছে।

স্থানীয় যে কোনো বিষয়ে এডভোকেসি যদি স্থানীয় সংগঠনের সাথে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় বা জাতীয় সংগঠন দ্বারা আয়োজন করা হয় যেখানে জাতিসংঘের সংস্থা বা আন্তর্জাতিক এনজিও সহায়তা করবে- তাহলে তা কার্যকর ও স্থায়িত্বশীলতার দিকে ধাবিত হবে। স্থায়িত্বশীলতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের জন্য এটিই হতে পারে সর্বোত্তম পন্থা।

১০. মাঝে মাঝে আপনাদের এডভোকেসি নেতিবাচক, আরোপিত ও আক্রমণাত্মক মনে হয়; এ ব্যাপারে আপনারা কি মনে করেন?

আমরা যেমন কারো উপর স্থানীয়করণ চাপিয়ে দেয়ায় বিশ্বাস করি না তেমনি আক্রমণাত্মক বা নেতিবাচক পদ্ধতিতেও আমাদের আস্থা নেই। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে আমাদের অপ্রিয় সত্য বলতে হয় বৈকি।

গ্রান্ড বারগেইন বা চ্যার্টার ফর চেঞ্জ চুক্তিতে স্বাক্ষর বা সমর্থনকারী জাতিসংঘের সংস্থা এবং আইএনজিওদের অনেকেই তাদের স্থানীয় পর্যায়ে নিযুক্ত কর্মীর জন্য ঐ চুক্তিগুলো সম্পর্কে জানাবোঝা ও বাস্তবায়নের জন্য তেমন কোনো নীতিমালা বা আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে বলে আমরা জানতে পারিনি। কিছু আইএনজিও’র স্থানীয়করণ নিয়ে প্রকল্প রয়েছে এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে তারা ভালো প্রতিবেদনও তৈরি করেছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা দাবি তুলেছি, জাতিসংঘের সংস্থা ও আইএনজিও তাদের কর্মীদের মাঝে সকল চুক্তি ও প্রতিশ্রুতির দলিলগুলো নিয়ে আলোচনা করুক এবং এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে কী করণীয় সে সম্পর্কে তাদের ভাবনা বিনিময় করুক। আমরা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র আত্মপোলব্ধির এই অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে টেকসই স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া অর্থাৎ কোনো দেশের স্থায়িত্বশীল ও ইতিবাচক স্থানীয় সিএসও/ এনজিও সেক্টর প্রতিষ্ঠা।

আমরা সকল অংশিদারের সাথে ইতিবাচক সম্পৃক্ততা ও আলোচনায় বিশ্বাস করি। তবে, অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও সমালোচনামূলক প্রেক্ষাপট যেহেতু বিস্মৃত হবার উপায় নেই, সে কারণে অনেক সময় আমাদের বক্তব্য তীর্যক মনে হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের অনুরোধ হচ্ছে, রাজনৈতিক বহুমাত্রিকতার সংস্কৃতিকে চেতনা হিসেবে ধারণ করে উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের বক্তব্যের প্রতি সহনশীল হোন। এভাবেই ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সৃষ্টির পথ সুগম হবে।

১১. জাতিসংঘের সংস্থা এবং আইএনজিও-র নিজস্ব জবাদিহিতা পদ্ধতি রয়েছে। তাহলে আপনারা মাঠ পর্যায়ে তাদের জবাবদিহিতার আবেদন করছেন কেন? আপনারা কি তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন না?

আমাদের মনে রাখতে হবে, স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক এনজিও বা জাতিসংঘের সংস্থা যাই হোক না কেন- এগুলো সবই গণপ্রতিষ্ঠান। তাই আমাদের সকল পর্যায়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। তাছাড়া, উত্তরের সংগঠন হোক বা দক্ষিণের, সব সংগঠনেরই তহবিলের উৎস হচ্ছে করদাতা জনগণ। আর করদাতারা সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা চান।

জবাবদিহিতার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত- যা সাধারণত নিম্নগামী এবং খুব একটা কার্যকর নয়। একারণেই, বর্তমানে আমরা তৃণমূল জবাবদিহিতার দাবি তুলছি- অর্থাৎ উর্ধগামী জবাবদিহিতা।

স্থানীয় এনজিও বা সিএসও হিসেবে আমরা তাই তুলে ধরছি যা আন্তর্জাতিক দলিলসমূহে বলা হয়েছে সবাই সেসব চুক্তিতে একমত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা জোর দিচ্ছি গ্রান্ড বারগেইন প্রতিশ্রুতির কর্মধারা ০১- অধিকতর স্বচ্ছতা, কর্মধারা ০২- স্থানীয়করণ এবং কর্মধারা ০৬- অংশগ্রহণ বিপ্লব এবং সেই সাথে চার্টার ফর চেঞ্জের ৩ নম্বর প্রতিশ্রুতি- স্থানীয় এনজিওদের অর্থায়নে অধিকতর স্বচ্ছতা ইত্যাদির উপর।

সম্মুখের সারির কাজের জবাবদিহিতার দাবি উত্থাপনে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এবং এভাবে আমরা বরং তাদের কাজে সহায়তা করছি এবং তাদের কাজকে শক্তিশালী করছি।

আমাদের সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, জাতিসংঘের সাবেক এবং বর্তমান মহাসচিবগণ কার্যক্রমের নবধারা এবং স্থানীয়করণকে রূপান্তরের এজেন্ডা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা আহবান জানিয়েছেন, মানবিক ও উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে আমাদেরকে স্থানীয়দের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তারা স্থায়ীত্বশীলতাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আরো বেশি সম্পৃক্ত হবার উপর জোর দিয়েছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে ব্যাপক আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন।

আমরা জানি, এটা রাতারাতি সম্ভব নয় এবং এটিও বিশ্বাস করি সব জায়গায় একই সূত্র কাজ করবে না। এটা মাঠ পর্যায় বা চাহিদা প্রান্তিক পক্ষসমূহকে ক্রমাগত সম্পৃক্ত করা এবং নিরবচ্ছিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেই এটি অর্জন করা সম্ভব।

১২. আইএনজিওর ভূমিকাকে আপনারা কিভাবে দেখেন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে?

বিশেষ করে উত্তর বিশ্বে বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইএনজিও নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা, মানবিক দায়িত্বশীলতার বৈশ্বিক অনৈক্য এবং বৈরি বাণিজ্য ও কর নিয়ন্ত্রণের কারণে সৃষ্ট রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বৈষম্য ইত্যাদির প্রভাবে আজকাল এক নয়া ‘আন্তর্জাতিকতাবাদ’-এর ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে আইএনজিওর ভাল কিছু গবেষণা ও কার্যক্রম রয়েছে। তারা এ বিষয়গুলোতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।

অধিকন্তু, উন্নত দেশগুলোতেও আজকাল অসহযোগিতা ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তি, গণতন্ত্র, সমতা ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক এক পৃথিবী প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ‘বিশ্ব নাগরিক’ হিসেবে সামগ্রিক উন্নয়ন শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা সবাই তাইই চাই। এ ব্যাপারে আমরা আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহ নেতৃত্বই আশা করি।

১৩. আপনাদের কি মনে হয় না, মাঝে মাঝে আপনাদের বক্তব্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যায়?

আমরা চাই জাতিসংঘের সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত থাকার বদলে তাদের অংশিদারদের কাজ মনিটরিং করুক এবং কারিগরী সহায়তা প্রদান করুক। স্থায়িত্বশীলতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও স্থানীয় এনজিও/সিএসও’এর উন্নয়নের জন্য মূলত এটিই কার্যকর উদ্যোগ। জাতিসংঘের অনেক নীতিমালা রয়েছে, যেখানে প্রগতিশীল সুশীল সমাজের সাথে সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। সুশীল সমাজের ভূমিকার গুরুত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক দলিলে যেমন- এসডিজি/ উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০, মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ, বৈশি^ক শরণার্থী চুক্তি এবং বৈশ্বিক স্থানান্তর চুক্তি এবং আরো অনেক।

সিরিয়ার মতো কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায়, যেখানে স্থানীয় সংগঠনের অনুপস্থিতি রয়েছে বা থাকলেও তাদের তেমন সক্ষমতা নেই, এমন স্থানে জাতিসংঘ বা তাদের শান্তিরক্ষা মিশন উদ্বাস্তু বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে মৌলিক সেবা প্রদানের জন্য সরাসরি মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি চালাতে পারে। বাংলাদেশে তো সেই অবস্থা নেই।

১৪. ‘জাতিসংঘ আমাদের শেষ আশ্রয়’ বলতে আপনারা কী বুঝাতে চান? আপনারা কি জাতিসংঘের কাছে সুরক্ষা বা তাদের মধ্যস্থতা সহায়তা চান?

হ্যাঁ, এটা সত্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার বা পুনর্বন্টনশীল ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোই আমাদের শেষ আশ্রয়। খুব সম্প্রতি সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্তি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। কাজেই পৃথিবীতে আমরা আরও শক্তিশালী জাতিসংঘ ব্যবস্থা চাই। জাতিসংঘই ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটারিয়ান সামিট আয়োজন করেছে, তারাই গ্রান্ড বারগেইন প্রতিশ্রুতির উৎস।

সূতরাং স্বাভাবিকভাবেই আমরা বিশেষ করে স্থানীয় সিএসও/ এনজিও’র জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর কাছে সুরক্ষা ও আশ্রয় প্রদানের সহায়তাকারীর ভূমিকা আশা করি।

১৫. আপনারা কি সকলের অংশগ্রহন ও সম্পূরক ভূমিকায় বিশ্বাসী?

হ্যাঁ, অবশ্যই। সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করাই আমাদের পদ্ধতি- অর্থাৎ জাতিসংঘের সংস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিও, স্থানীয় সংগঠন- সকল পক্ষকেই আমাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, সম্পূরক ভূমিকার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে প্রতিটি পক্ষেরই কাজের একটা তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে- সে অনুযায়ী তাদের কাজ করতে হবে এবং একেক জনকে একেক জায়গায় নেতৃত্ব নিতে হবে। আর স্থায়িত্বশীলতা এবং জবাবদিহিতার স্বার্থে তাদেরকে স্থানীয় সিএসও বা এনজিও’র সাথে কাজ করতে হবে।

১৬. আপনারা কি বাংলাদেশে বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিরোধি?

ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়। বরং আমরা বিশ্বাস করি, এটি চাহিদা-ভিত্তিক হওয়া উচিত, সরবরাহ-ভিত্তিক নয়। প্রথমে চাহিদা নিরূপণ করতে হবে এবং দেখতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ কর্মি আছে কিনা।

তার চেয়ে বড় কথা, আমরা নিয়মতান্ত্রিক এবং সাশ্রয়ীভাবে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর পক্ষে। তাদের প্রাথমিক কর্মবিবরণির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে হবে, কাজের মধ্য দিয়ে তারা স্থানীয় সহকর্মির কাছে তাদের জ্ঞান এবং কারিগরি দক্ষতা ক্রমাগত হস্তান্তর করবেন। বাংলাদেশে আইএনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের মধ্যে এ ব্যাপারে অনেক ভাল উদাহরণ রয়েছে।

এটাও লক্ষ্য করা গেছে যে, স্নাতক ডিগ্রিধারীদের এদেশে ‘বিদেশী বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং অভিযোগ এসেছে যে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় স্থানীয় সহকর্মিদেরকে তাদের পেছনে অনেক শ্রম ও সময় দিতে হয় স্থানীয়দের, যা একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি। কাজেই দাবি উঠেছে, নির্বাহী পদগুলোতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে হবে।

১৭. আপনারা কেন স্থানীয় সংগঠনের কর্মির জাতিসংঘ এবং আইএনজিওতে অবাধ স্থানান্তরের বিরোধি?

প্রথমেই বলে রাখি, আমরা কর্মী স্থানান্তরের বিপক্ষে নই, যদি জাতিসংঘ এবং আইএনজিও নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ গ্রহণ করে:
– স্থানীয় এনজিও ফ্রেশ এবং সদ্য স্নাতকোত্তর একজন কর্মীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রচুর সম্পদ বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগ বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের সংস্থা বা আইএনজিও স্থানীয় সংগঠনকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারত- স্থানীয় পর্যায়ে একজন তৈরি দক্ষ কর্মি পাবার বিনিময়ে। এতে তাদের সম্পদের সাশ্রয়ই হতো। আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের প্রতিশ্রুতি চার্টার ফর চেঞ্জে এটি উদ্ধৃত হয়েছে। যদিও এটা মেনে চলার নজির খুব একটা দেখা যায় না।

– অধিকাংশ সময়ে একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এই নিয়োগের ঘটনাগুলো ঘটে ন্যূনতম নোটিশ পিরিয়ড বা কোনো ধরনের রেফারেন্স যাচাই না করেই। রোহিঙ্গা রেসপন্সে এটি ঘটেছে। এর ফলে কিছু স্থানীয় এনজিও দশক ধরে বিনিয়োগ করে অনেক যতœ করে তৈরি করা দক্ষ কর্মী হারিয়ে স্থবিরতার মধ্যে পতিত হয়েছে।

– এ ধরনের স্থানান্তর বা মেধা পাচারের ঘটনা ঘটে কারণ জাতিসংঘের সংস্থা বা আইএনজিও যে মাত্রায় বেতন অফার করে তা দেয়া স্থানীয় সংগঠনের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, জাতিসংঘের সংস্থা বা আইএনজিও নিজেদের কর্মসূচিতে কর্মীদের যে বেতন দেয়, স্থানীয় এনজিওর সাথে পার্টনারশিপ স্থাপনের সময় প্রকল্পে একই ধরনের কাজের জন্য সেই মাত্রার বেতন তারা প্রদান করেন না।

১৮. আপনারা কেন একই ধরনের বেতন কাঠামো এবং বেতনের মাত্রা কমানোর দাবি করছেন, বিশেষ করে যখন আপনারা রোহিঙ্গা রেসপন্সে স্থানীয়করণের দাবি তুলছেন?

আমরা খুব সচেতনভাবেই একটি অভিন্ন বেতন কর্মকাঠামো (Salary Framework) দাবি করছি, কোনো নির্দিষ্ট বেতন-কাঠামো বা স্যালারি স্ট্রাকচার নয়। অর্থাৎ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে একটি সর্বনিন্ম থেকে সর্বোচ্চ পরিসর নির্ধারণের কথা আমরা বলছি।
হ্যাঁ, আমরা রোহিঙ্গা রেসপন্সে বর্তমান বেতন কাঠামোর কমানোর দাবি করছি। কারণ, শরণার্থী সাড়াপ্রদানের ব্যাপক মাত্রার কর্মসূচির কারণে যে উচ্চ কাঠামোতে বেতন অফার করা হচ্ছে তা বিদ্যমান এনজিও চর্চার চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া, শরণার্থীদের জন্য প্রতিশ্রুতি তহবিলের অনিশ্চয়তাপূর্ণ একটা পরিস্থিতিতে এই উচ্চ বেতন সম্পন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভবও নয়, তা স্থায়িত্বশীলও নয়।

আমাদের দাবি হচ্ছে, দাতা প্রতিষ্ঠাগুলোর (জাতিসংঘের কোনো সংস্থা বা আইএনজিও যেই হোক) উচিত দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসাব করে স্থানীয় এনজিদের নিজস্ব বেতন কাঠামো নির্ধারণ করার স্বাধীনতা এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করা। আইএনজিওর নিজস্ব বেতন কাঠামো তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় কারণ, তারা হয়ত দীর্ঘমেয়াদে ঐ স্থানে কাজ করবে না, এবং প্রকল্প শেষ করে তারা চলে গেলেও সেখানে স্থানীয় সংগঠনকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, কক্সবাজারে স্থানীয় নাগরিকগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। বেসরকারী কর্মজীবী ও সীমিত আয়ের নাগরিকদের একটি জোট এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের হঠাৎ বর্ধিত বেতন প্রদানের প্রভাবে শহরে এই অবাঞ্ছিত মূল্য বৃদ্ধি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা স্মারকলিপিতে দাবি করেছেন। কক্সবাজার শহরের সাধারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্যান্য শহরের তুলনায় ২৫% থেকে ৪০% বেড়ে গিয়ে একটি অর্থনৈতিক স্ফীতি তৈরি করেছে।

আমরা বিশ্বাস করি, কর্মীর বেতন কাঠামো হঠাৎ করে একমাসে বর্ধিত নগদের পরিবর্তে সহনীয় মাত্রায় দীর্ঘকালীন সুবিধা প্রদান করাই বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটি একটি অপচয়মূলক ভোগবাদী সংস্কৃতি সৃষ্টি করবে। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো স্থিতিশীল মানবসম্পদ তৈরির উপযোগী স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা চর্চা নয়।

১৯. কিছু আইএনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থা শতভাগ প্রকল্প স্থানীয় এনজিওদের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যেমে বাস্তবায়ন করছে। তারপরও কেন আপনারা অংশীদারিত্বের নীতির দাবি করছেন?

বিদ্যমান অংশীদারিত্বের অধিকাংশই হচ্ছে: (ক) “এক প্রকল্প শেষে আরেক প্রকল্প”- এই পদ্ধতিতে চলছে, স্থায়ীত্বশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের কোনো দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সেখানে অনুপস্থিত; (খ) স্থানীয় সংগঠনগুলো শুধুমাত্র “বাস্তবায়নকারি অংশিদার”, “সিদ্ধান্ত-গ্রহণের অংশিদার” নয়, (গ) জাতিসংঘের সংস্থা বা আইএনজিও এক্ষেত্রে ওভারহেড বা ব্যবস্থাপনা খরচ প্রদান করে না বললেই চলে। বরং মাঝে মাঝে তারা খরচের কিছু খাতে অবদান রাখার দাবি করে, যা স্থানীয় এনজিও-র প্রতি এক প্রকার অনুচিত চাপ, এবং (ঘ) ভুক্তভোগি জনগোষ্ঠি এবং অংশিদার সংগঠনের জন্য কথা বলা বা অংশগ্রহণের সুযোগ বেশ সীমিত, কারণ প্রকাশিত কোনো সংগঠনের আচরণ বিধি, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, অংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা কাঠামো ইত্যাদি প্রায় ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।

প্রকৃতপক্ষে, “সাব-কন্ট্রাক্ট এবং অধঃস্তন সংস্কৃতি”র পুনরাবৃত্তিই হয়ে চলেছে।

উপরন্তু, কোনো স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় এই পার্টনারশিপগুলো তৈরি হয় না। বরং পছন্দমতো সংগঠন বেছে নেয়া বা ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের চর্চা এক্ষেত্রে বেশ দেখা যায়।

এই ধরনের চর্চা দীর্ঘ মেয়াদে দেশে সার্বভৌম, জবাবদিহিতাসম্পন্ন এবং টেকসই স্থানীয় এনজিও ও নাগরিক সংগঠন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা খর্ব করছে। বরং বাঁধা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের চাপে প্রকৃত কাজের শক্তি ও সদিচ্ছা সীমিত হয়ে আসছে। আমরা জানি, এই পরিস্থিতিতে অনেক স্থানীয় সংগঠন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

তাই, স্থানীয়করণের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ি আমরা জাতিসংঘের সংস্থা ও আইএনজিও-র কাছে অংশীদারিত্বের নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করছি, যার ভিত্তি হবে (ক) মানদন্ডভিত্তিক, (খ) সার্বভৌম, জবাবদিহিতামূলক এবং টেকসই স্থানীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্য ও অর্জনের সূচক এতে অর্ন্তভুক্ত থাকবে, (গ) নীতিমালার চর্চা হবে স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক।

২০. আইএনজিও থেকে আপনারা কেন এত অধিক স্থানীয়করণের চর্চা প্রত্যাশা করেন?

বিশেষ করে আইএনজিও হতে এই প্রত্যাশার পক্ষে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে।

প্রথমত, আইএনজিওরাই যারা ২০১৫ সালে চার্টার ফর চেঞ্জ প্রতিশ্রুতিসমূহ প্রস্তুত করে এবং নিজেরা তাতে স্বাক্ষর করে; এমনকি মে ২০১৬ তে গ্রান্ড বারগেইন প্রতিশ্রুতির আগেই তারা এটা সম্পন্ন করে।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয়করণের লক্ষ্যে আইএনজিওসমূহ বেশকিছু প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান এইড পরিচালিত “শিফটিং পাওয়ার” এবং অক্সফাম পরিচালিত “ইএলএনএইচএ”- বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে সমাদৃত।
এর বাইরে আইএনজিওসমূহের প্রকাশিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ এবং একশন রিসার্চ রয়েছে, যা স্থানীয়করণের জন্য আদর্শ। তাদের মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:
(i) The Start Fund, Start Network and Localization (এপ্রিল ২০১৭) যেখানে প্রথম স্থানীয়করণের সাতটি মাত্রা উল্লেখ করা হয়। মানবিক সহায়তায় স্টার্ট ফান্ড আইএনজিওদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক।
(ii) Localization in Practice, Emerging Indicators and Practical Recommendations (জুন ২০১৮) এসিএফ, স্টার্ট নেটওয়ার্ক, ইউকেএইড এবং সিডিএসি নেটওয়ার্ক কর্তৃক প্রকাশিত।
(iii) Accelerating Localization through Partnership (ফেব্রুয়ারি ২০১৯) ক্রিশ্চিয়ান এইড, কেয়ার, টিয়ারফান্ড, একশন এইড, সিএএফওডি এবং অক্সফাম কর্তৃক প্রকাশিত। স্থানীয়করণের পক্ষে এটি একটি চমৎকার গাইড যা চারটি দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি করা।
(iv) NGOs and Risk-Managing Uncertainty in Local– International Partnership (মার্চ ২০১৭) ইউএসএআইডি, ইন্টারএকশন এবং হিউম্যানিটিরিয়ান আউটকামস। কেয়ার, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ড্যানিশ রেফিউজি কাউন্সিল, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস, মার্সি ক্রপ, নরওজিয়ান রেফিউজি কাউন্সিল, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তায় প্রকাশিত।

তাই, স্বাভাবিকভাবে আমরা বাংলাদেশে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সহায়তা কর্মসূচিতে এইসব প্রকল্প ও প্রতিবেদনের প্রতিফলন দেখতে চাই।

Click here for download

error: Content is protected !!